আসাদুজ্জামান আসাদ
গাজীপুরের শ্রীপুর, মাওনা চৌরাস্তায় ফুটপাতের অস্থায়ী বাজারে খাজনা তোলাকে কেন্দ্র করে ইজারাদার ও হকারদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয় উভয় পক্ষ। এঘটনায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন- তেলিহাটি ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি আতিক বন্দুকশী (৪০) ও বিএনপি নেতা হানিফ (২৮) সহ উভয় পক্ষের অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায়। বন্ধ রয়েছে ফুটপাতের সব দোকানপাট।
(২৫’শে এপ্রিল ২০২৫) শুক্রবার সন্ধ্যা ৬:টার দিকে মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভার ব্রীজের দুপাশে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
মাওনা চৌরস্তার অস্থায়ী বাজারের ইজারাদার মোঃ কাজল ফকির বলেন, আমি সরকারের কাছ থেকে যথাযথ রাজস্ব দিয়ে বাজারের বৈধ ইজারা নিয়ে খাজনা উঠাচ্ছি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮:টার দিকে ফুটপাতের দোকানিরা খাজনা ওঠানোর সময় আমার এক লোককে মারধর করে টাকা–পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
আজ আবার খাজনা ওঠাতে গেলে ভাড়াটে সন্ত্রাসী জাহিদের নেতৃত্বে আমার লোকদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। এ সময় হকাররা দেশীয় লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের লোকদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারধর করে। এতে আমাদের ১৭ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম ব্যাপারী, আশিক ও ইমরান গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের এক দোকানি বলেন, আমরা বহু বছর ধরে মাওনা চৌরাস্তার ফুটপাতে ব্যবসা করে আসছি। কোনো দিন খাজনা দিতে হয় নাই। হঠাৎ করে কয়েক দিন ধরে আমাদের একটি রসিদ ধরিয়ে দিয়ে খাজনা আদায় করছে। কিছু কিছু দোকানি খাজনা দিতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে ইজারাদার ও দোকানিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আজকেও খাজনা আদায় করতে গেলে অতিরিক্ত খাজনা বন্ধ করতে বললে প্রথমে কাটাকাটি হয়। এ পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়ে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, বহিষ্কৃত শ্রমিকদল নেতা কাজল ফকির ও বহিষ্কৃত পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মাওনা চৌরাস্তার ভাসমান বাজারের ইজারা নেন। উড়ালসেতুর নিচে মহাসড়কে ভাসমান দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে তাদের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির অপর একটি পক্ষের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
হকারদের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া জাহিদ হোসেনের বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে মহাসড়কে ভাসমান দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ইজারাদার কাজল ফকির গংয়ের সঙ্গে বহিষ্কৃত নেতা আবুল কালাম অনুসারীদের কথা কাটাকাটি হয়। ইজারাদার পক্ষ দোকানিদের কাছ থেকে টাকা তুলতে গেলে আবুল কালামের অনুসারীরা বাধা দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুরো মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বহিষ্কৃত দুই নেতা কাজল ফকির ও সেলিম বাজার ইজারার নামে চাঁদাবাজি করছেন। এটা ঠিক না। শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারী বলেন, পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা শুনেছি এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে যারা এতে জড়িত, তারা সবাই ইতোমধ্যেই দল থেকে বহিষ্কৃত।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিজন মালাকার বলেন, আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বিজন মালাকার বলেন, আহত তিনজনের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আতিক বন্দুকশীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী বাজার কাজল ফকির নামের এক ব্যক্তিকে বৈধ ইজারা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে, বর্তমানে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
