কৃষি মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত ‘কৃষি ফার্ম শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৭’ বাস্তবায়ন ও ৯দফা দাবীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)র’ অনিয়মিত শ্রমিকদেরকে নিয়মিত করণের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাব সহ সারা দেশে ৪৯টি জেলায় সকাল ১০টায় একযোগে মানববন্ধন করেছে ।
উপস্থিত শ্রমিকরা বলেন, আমরা আজকে বৈষম্যের স্বীকার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও বৈষম্য বিদায় নেয়নি।
১৮৮৬ সালের শিকাগো শহরের আন্দোলনের মাধ্যমে যে শ্রমিকরা তাদের জীবন দিয়ে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়েছিলেন, যারা বিশ্বকে জানিয়েছেন যে, শ্রমিকরাও মানুষ তাদেরও অধিকার আছে, সম্মান আছে, এবং সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিকরা প্রয়োজনে আত্মত্যাগ করতে ও সদ্য প্রস্তুত।
আজ হে মার্কেট আন্দোলনের ১৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকরা এখনো তাদের ন্যায্য অধিকার ও মজুরি থেকে বঞ্চিত। তারা বিশ্বকে জানিয়েছেন যে, শ্রমিকরাও মানুষ, তাদের সেই আত্মত্যাগ আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়। তবে বাস্তবতার নিরীখে আজও আমাদের সামনে রয়েছে দীর্ঘ পথ। আর এর একমাত্র কারণ হলো আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মালিক পক্ষের সদিচ্ছার ঘাটতি। এই বাস্তাবতা আমাদের ভাবিয়ে তোলে এবং আমাদের সম্মিলিতভাবে অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেয়।
আমরা আমাদের মিডিয়ার ভাইদের মাধ্যমে সরকারকে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ‘কৃষি ফার্ম শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৭’ প্রনয়নের ৮ (আট) বছর অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)তে এর ছিটেফোটাও বাস্তবায়ন হয়নি।
সময়ে সময়ে মন্ত্রণালয় হতে ‘কৃষি ফার্ম শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৭’ বাস্তবায়নের জন্য বিএডিসি’র সম্মানিত চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে প্রত্র প্রেরণ করা হলেও তা বিএডিসি বাস্তবায়ন করেনি।
এর একমাত্র কারণ শ্রমিকদের উপর যাতে নির্যাতন করা যায় এবং ৩০ দিনের হাজিরা যাতে দেয়া না লাগে।
শ্রমিকরা যাতে ৩০ দিনের বেতন না পায়।
তাই কৃষি মন্ত্রণালয় হতে পত্র করা হলেও বিএডিসি তা বাস্তবায়ন করেনি।
যার ফলে বিএডিসিতে ‘কৃষি ফার্ম শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৭’ আলোর মুখ দেখেনি।
আপনি যদি এসকল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন ”কৃষি ফার্ম”শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রন নীতিমালা ২০১৭’ বাস্তবায়ন হয়নি? তার আপনাকে একটি খোড়া যুক্তি দেখাবে “শ্রমিকদের নিয়মিত করলে তারা আর আমাদের কথামত চলবে না। তারা আর আমাদের মান্য করবেনা”। অথচ বিএডিসি অফিসের কার্যক্রম হতে মাঠ পর্যায়ের সকল কার্যক্রম অনিয়মিত শ্রমিকদের মাধ্যমে বাস্তাবায়িত হচ্ছে।
এখানে আরো একটি বিষয় জানানো প্রয়োজন তা হলো কৃষি মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত ‘কৃষি ফার্ম শ্রমিক ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৭’ বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দেয়া হলে উপায়ান্ত না পেয়ে বিএডিসির কর্মকর্তাগণ মনগড়া ‘বিএডিসি শ্রমিক ম্যানুয়েল’ তৈরী করেন। যা পরবর্তীতে শ্রমিকদের অধিকার পরিপন্থি হওয়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় হতে অনুমোদন দেয়া হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয় যেখানে তার আওতাধীন সকল শ্রমিকদের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
সেখানে বিএডিসি ঐ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান হয়েও মনগড়া একটি ম্যানুয়াল প্রস্তুত করে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে প্রায় দীর্ঘ
৮ বছর যাবৎ। বিএডিসি শ্রমিক ম্যানুয়াল অনুয়ায়ী বিএডিসিতে কোন নিয়মিত শ্রমিক নেই। যারা আছেন তারা ‘মৌসুমি শ্রমিক’।
আমরা জানতে চাই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, অফিস সহায়ক, গাড়ীচালক, মেকানিক, টেকনিশিয়ান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, দারোয়ান পদে যারা দীর্ঘ ৮-১০ বছর যাবৎ শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে তারা কেমন মৌসুমি শ্রমিক? তারা কোন মৌসুমে কাজ করেন?
বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে অন্যায়, বৈষম্য ও সর্বপোরি সংস্কার বাস্তবায়নে শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি কাজ করে যাচ্ছে এবং বিএডিসি’র ভাবমূর্তি রক্ষা করতেছে। দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেছে। আমরা বিএডিসির শ্রমিকগণ একটা বড় অংশ হিসাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা নিয়ে কাজ করি। শ্রমিক বাঁচলে কৃষি বাচবে, কৃষি বাঁচলে, দেশ বাচবে। উল্লেখ্য, বিএডিসি’র কিছু কর্মকর্তাগণ শ্রমিকদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তারা উক্ত প্রজ্ঞাপনের আলোকে নিজেদের ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি ম্যানুয়াল তৈরী করে, যা কৃষি মন্ত্রনালয়ের বিরোধী হওয়ায় এখনো তা অনুমোদিত হয়নি।
সরকারের নিকট বিএডিসি’র অনিয়মিত শ্রমিকদের আবেদন, নিম্নোক্ত দাবীগুলো মেনে নিয়ে বিএডিসিতে কর্মরত সকল শ্রমিকদের অসহায়ত্ব, দারিদ্রতা ও ক্ষুধামুক্ত জীবন যাপনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন।
শ্রমিকরা দাবী করেন
১। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত কৃষি ফার্ম নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৭ বিএডিসি তে বাস্তবায়ন করতে হবে:
২। যারা বছরে ২৪০ দিন কাজ করেছে তাদেরকে অনিয়মিত শ্রমিক থেকে নিয়মিতকরণ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। ৩
। বিএডিসি’র একজন শ্রমিক যে স্থানে কর্মে নিয়োজিত ঐ স্থানের কর্মের মজুরী প্রদান করতে হবে;
৮। বিএডিসি শ্রমিকদের মাসে ৩০ (ত্রিশ) দিনের হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে;
৫। বিএডিসি শ্রমিকদের সময় বেঁধে কাজ চাই, অতিরিক্ত সময়ের কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিতে হবে।
৬। শ্রমিকদের বিএডিসি থেকে বিনা কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা বন্ধ করতে হবে;
৭। শোষণমুক্ত, মর্যাদা সম্পন্ন, বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ, অধিকার সুরক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে;
৮। বিএডিসি নারী শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ০৪ (চার) মাস নিশ্চিত করতে হবে।
৯। ‘মৌসুমি শ্রমিক’ নামক প্রহসন থেকে মুক্তি ও ‘বিএডিসি শ্রমিক ম্যানুয়াল অবিলম্বে অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে বাতিল করতে হবে: