আসাদুজ্জামান
স্টাফ রিপোর্টার
মাত্র কুড়ি বছরের এক তরুণী। কিন্তু পেছনে তাকালে দেখা যায় বিস্ময়কর সাহিত্যকর্ম, পুরস্কার আর সমাজসেবার এক বিশাল ভাণ্ডার। স্বপ্নবিলাসী চেতনায় গড়া একজন অসাধারণ নারীর নাম রোদেলা শারমিন সরকার। ত্রিশালের ভাটিদাস পাড়ার গর্ব, দেশের নবীন কবিতার নতুন আলো।
ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের এক ছায়াঘেরা গ্রাম ভাটিদাস পাড়া। এখানেই ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন রোদেলা শারমিন সরকার, যিনি সাহিত্য অঙ্গনে “রুপা”, “কুহেলি”, “রোদ”, কিংবা “বিদ্রোহী” নামে পরিচিত।
তার বাবা মোঃ দেলোয়ার হোসেন সরকার পেশায় একজন কৃষক এবং মা মোছাঃ সেতারা খানম একজন গৃহিণী। এক আদর্শ মুসলিম পরিবারে
বেড়ে উঠা এই মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী ও সৃষ্টিশীল।
৩নং দাশপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক শেষে শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হন। পাশাপাশি তিনি বিএসসি নার্সিং-এও চান্স পেয়ে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক বছর অধ্যয়ন করেন।
মাত্র আট বছর বয়স থেকেই লেখালেখির সঙ্গে তার সম্পর্ক। ২০২০ সালে প্রকাশ্যে সাহিত্যাঙ্গনে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও ২০২৩ সালে সরকারি স্বীকৃতি পান কবি ও লেখক হিসেবে। এখন পর্যন্ত একাধিক একক ও যৌথ কাব্যগ্রন্থে অংশগ্রহণ করেছেন — যার মধ্যে “অবিনশ্বর বিকেল”, “বন্ধ জানালা”, “ভোরের শিশির”, “স্বপ্নে অনুভূতি” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তরুণ বয়সেই তিনি অর্জন করেছেন ‘ইয়ুথ ট্যালেন্ট স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’, ‘কবি আল মাহমুদ স্মৃতি পদক’, ‘সুর সাহিত্য পুরস্কার’ সহ অসংখ্য সাহিত্য সম্মাননা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক কাব্যগ্রন্থে তার কবিতা জায়গা করে নিয়েছে। তার কবিতা দেশের দৈনিক পত্রিকা, সাহিত্য ম্যাগাজিন ও অনলাইন মাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
রোদেলা শুধুই কবি নন, তিনি একাধারে বাংলাদেশ গার্লস গাইডের অধিনায়ক, ভলান্টিয়ার (ভিডিপি সদস্য), বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা।
তিনি হিমু স্মৃতি সংরক্ষণ সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনে সম্পাদকীয় ও নেতৃত্বের দায়িত্বে রয়েছেন।
রোদেলা শারমিন একজন চিন্তাশীল, আত্মপ্রত্যয়ী ও সংযত মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সততা ও মানবসেবাকে তিনি জীবনের মূলনীতি হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
তার প্রিয় কবি কাজী নজরুলইসলাম, প্রিয় খাবার চা, প্রিয় প্রাণী বিড়াল। সাহিত্য, সেবামূলক কাজ, আবৃত্তি ও খেলাধুলায় তার দক্ষতা প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, “আমি মানুষ হতে চাই — প্রকৃত মানুষ, যারা নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্য বাঁচে।”
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো মানবসেবার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া।
ত্রিশালের সেই ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা রোদেলা এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। সাহিত্য, শিক্ষা ও সামাজিক নেতৃত্ব — সবখানেই তার স্পষ্ট ছাপ। রোদেলার মতো একজন তরুণীই প্রমাণ করে দেন, সীমাবদ্ধতা বাধা নয়, বরং সাহস আর শ্রমই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।